আগামী দিনটি কেমন হবে তা নির্ভর করে আজকের শিশুটিকে আমরা কি শিক্ষা দিচ্ছি বা কেমন শিক্ষা দিচ্ছি তার উপর। কারণ আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষৎ। শিশুরা একটি জাতির সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ । এই মূল্যবান সম্পদকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারলে তারা হয়ে যেতে পারে একটি জাতির জন্য বোঝা সরুপ। একটি শিশুর প্রথম আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ শুরু হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে। এখানে তার জন্য একটি শিশুবান্ধব ও আনন্দদায়ক শিখন পরিবেশ তৈরি করতে পারলে শিশুর মানসিক বিকাশ পরিপূর্ণভাবে সংঘটিত হতে পারে। শিশুর মনে আনন্দই তার দেহ মনে শিখণের শক্তি যোগায়। আর তাই শ্রেণিকক্ষকে আনন্দমূখর ও শিশুবান্ধব করতে না পারলে তার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ আশা করা যায় না। সেই সঙ্গে তার বিদ্যালয় হতে ঝরে পড়ার সমূহ সম্ভাবনাও দেখা দেয়।
একটি শিশুর উপর পরিবেশের যে প্রভাব পড়ে শিশু তাই শেখে। অর্থাৎ শিশুর নিকট পরিবেশের প্রভাব দ্বারা তার বাহ্যিক আচরণ, চিন্তাধারা এবং দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সুতরাং শিশুর জন্য একটি আনন্দঘন পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে কোমলমতি শিশুরা মনের আনন্দে শিক্ষা গ্রহণ করবে। আনন্দ ছাড়া কোমলমতি শিশুরা শিক্ষা লাভে আগ্রহ প্রকাশ করবে না। এজন্য বিদ্যালয়ের পরিবেশকে হতে হবে অতি আকর্ষনীয়। শিশুরা মনের আনন্দে নিজের ইচ্ছেমত বিদ্যালয় আঙ্গিণায় হেসে-খেলে, ঘুরে-ফিরে, কল্পনার রঙ্গিন ঘুড়ি উড়িয়ে শিখবে। তার চারপাশে সমস্থ পৃথিবী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে। শিশুরা খেলতে খেলতেই বিশ্বকে জেনে নেবে, পুরে নেবে হাতের মুঠোয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই বিখ্যাত উক্তি এখানে বলাই যেতে পারে “আনন্দহীন শিক্ষা, শিক্ষা নয়, যে শিক্ষায় আনন্দ নেই, সে শিক্ষা প্রকৃত শিক্ষা হতে পারে না।”একান্ত নিজের মতো করে শিখন নিশ্চিত করতে এবং বিশ্বকে নিজের হাতের মুঠোয় এনে জানার সঙ্গে অজানার মিতালী ঘটিয়ে শিশুর শেখার নব দিগন্ত উন্মোচন করতে না পারলে শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যহত হতে বাধ্য।
উপরোক্ত চিন্তা-চেতনাকে মনে মনে লালন করে শেখার মাধ্যম ও বাহন হিসেবে আনন্দঘন পরিবেশকে মূল কেন্দ্র ধরে গুরুদাসপুর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার এগিয়ে যাচ্ছে। এখানকার প্রতিটি বিদ্যালয় শিশুবান্ধব। ঢেঁকি দোলনা ও স্ট্যান্ড দেলনা প্রতিটা বিদ্যালয়েয় একটি সাধারণ খেলনা সামগ্রী। বিদ্যালয়ে শিশুরা মনের আনন্দে পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে খেলাধুলা করছে। এতে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির হার প্রায় শূন্যের কোঠায় পৌঁছেছে।
এছাড়াও প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ সুসজ্জিত। বর্ণ চার্ট থেকে শুরু করে সমস্থ বিশ্বকেই চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি করার চেষ্টা করা হয়েছে। শিশু তার বিশ্বকে নিজ শ্রেণিকক্ষে বসেই জানতে পারছে। রঙ্গিন রঙ্গিন ছবি ও পোস্টারে শ্রেণিকক্ষের চার দেওয়াল বর্ণিল রুপ ধারণ করেছে। শিশু মনের আনন্দে শ্রেণিকক্ষে বসে পাঠ গ্রহণ করছে। বিদ্যালয় গৃহ হয়ে গেছে তার নিজ গৃহ -বিশ্ব জানার এক অফুরান্ত দুয়ার।
এই মহান ও মহৎ কাজটি করার পিছনে কিছু নেপথ্য কারিগর কখনো সরবে আবার কখনো নিরবে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। উৎসাহ- উদ্দিপনা, বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সর্ব সময় ইতিবাচক সহযোগীতা করেছেন। এরমধ্যে উপজেলা শিক্ষা অফিসার এস.এম. রফিকুল ইসলাম স্যার বিশেষভাবে ধন্যবাদ প্রাপ্তির দাবিদার। তাঁর বুদ্ধি, পরামর্শ কাজে গতি এনেছে ও কাজকে ত্বরান্নিত করেছে। এছাড়াও ইউআরসি ইন্সট্রাক্টর স্যার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্যার- তাঁদের অবদানকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নাই। প্রধান শিক্ষক, সহকারি শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের সাপোর্ট স্ট্যাপদের ধন্যবাদ, যারা নিরলসভাবে এহেন মহৎ কাজটি সম্পাদন করেছেন। পরিশেষে ধন্যবাদ সেই কোমলমতি শিশুদের যাদের জন্য এ আয়োজন। যাদের হাসি মাখা মুখ কাজের ক্লান্তিকে ভুলিয়ে দেয় আর ভবিষৎ-এ একটি অপার সম্ভাবনাময় জাতি চোখের সামনে স্বপ্ন নিয়ে দোলা দেয়।
মোঃ সুলতানুল আরেফীন
সহকারী শিক্ষক
গুরুদাসপুর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুরুদাসপুর, নাটোর।